Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বঙ্গবন্ধুর মৎস্যজীবীদের উন্নয়ন দর্শন ও প্রতিভাস

বঙ্গবন্ধুর মৎস্যজীবীদের উন্নয়ন দর্শন ও প্রতিভাস
কৃষিবিদ মোঃ লতিফুর রহমান সুজান
আজকের মৎস্যক্ষেত্রে যে বৈচিত্রময় সাফল্য, বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য ও পুষ্টি-নিরাপত্তাদানে সক্ষমতা সেই ভিত্তি বঙ্গবন্ধু নিষ্ঠা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে কৃষকের প্রতি অন্তরতম মমত্বে স্থাপন করেছেন। বঙ্গবন্ধু মৎস্য সম্পদকে কতটা গুরুত্ব দিতেন তা তাঁর নিজের জীবনের ঘটনাগুলো থেকেই উপলব্ধি করা যায়। বঙ্গবন্ধুর পছন্দের খাবার নিয়ে বেশ লেখা আছে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে। এই গ্রন্থে ৪ আগস্ট ১৯৬৬ সালের ঘটনায় বঙ্গবন্ধু লেখেন, ‘রেণু কিছু খাবার দিয়ে গেছে-কি করে একলা খেতে পারি? কই মাছ খেতে আমি ভালোবাসতাম, তাই ভেজে দিয়ে গেছে।’ গণভবনের লেকে তিনি মাছ ধরতেন, নিজ হাতে মাছকে খাবার দিতেন। তিনি বিভিন্ন সময় ভাষণে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, ধ্যান, ধারণা ছিল একমাত্র সোনার বাংলা গড়া। ৩০ জুন ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক সমবায় সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় সেমিনারে প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে উন্নত জীবনের অধিকারী হবে- এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন।’ এই পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন গণমুখী সমবায় আন্দোলনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা সমবায়ের পথ-সমাজতন্ত্রের পথ, গণতন্ত্রের পথ। সমবায়ের মাধ্যমে গরিব কৃষকরা যৌথভাবে উৎপাদন-যন্ত্রের মালিকানা লাভ করবে। অন্যদিকে অধিকতর উৎপাদন বৃদ্ধি ও সম্পদের সুষম বণ্টন ব্যবস্থায় প্রতিটি ক্ষুদ্র চাষি গণতান্ত্রিক অংশ ও অধিকার পাবে। জোতদার ধনী চাষির শোষণ থেকে তারা মুক্তিলাভ করবে সমবায়ের সংহত শক্তির দ্বারা। একইভাবে তিনি বলেছিলেন কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী, জেলে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যদি একজোট হয়ে পুঁজি এবং অন্যান্য উৎপাদনের মাধ্যমে একত্র করতে পারলে আর মধ্যবর্তী ধনিক ব্যবসায়ী-শিল্পপতির গোষ্ঠী তাদের শ্রমের ফসলকে লুট করে খেতে পারবে না।
জাতির পিতা প্রিয় কৃষক-মজুর-জেলে-তাঁতী ভাইদের সাহায্যে শোষণ ও প্রতিক্রিয়াশীল কোটারি স্বার্থকে চিরদিনের জন্য নস্যাৎ করে দেবে উল্লেখ করে বলেছিলেন একটি নুতন ও সুষম ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। জেলে সমিতি, তাঁতী সমিতি, গ্রামীণ কৃষক সমিতি যেন সত্যিকারের জেলে-তাঁতী, কৃষকের সংস্থা হয়। মধ্যবর্তী ব্যবসায়ী বা ধনী কৃষক যেন আবার এই সমিতিগুলোকে দখল করে অতীত দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি না করে। যদি আবার সেই কোটারি স্বার্থ সমবায়ের পবিত্রতা নষ্ট করে, তবে নিশ্চিতভাবে জেনে রাখুন যে আমরা সমসত্ম পুরাতন ব্যবস্থা বাতিল করে দেবো।
জুলাই ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের ৭২ হাজার জেলেকে পুনর্বাসন ও মৎস্য শিল্পের উন্নয়নের জন্য ৯১ কোটি ২ লক্ষ টাকার একটি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। এই কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১০১০৫টি নৌকা নির্মাণ ও জেলেদের ৫ কোটি পাউন্ড নাইলন সুতা সরবরাহ, ট্রানজিস্টর রেডিওসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ। নৌকার মধ্যে ১২০৫টি নৌকা হবে ইঞ্জিনচালিত। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে একদিকে দেশের মৎস্য শিল্পের যেমন উন্নতি হবে ঠিক তেমনি মৎস্য রপ্তানি করে সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে। অপরদিকে জেলেদের ব্যবসায়ী কর্তৃক শোষিত হওয়াও বন্ধ হয়ে যাবে উল্লেখ করেছিলেন। একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে স্বাধীনতা পর্যন্ত পাক বর্বর বাহিনী ৪০ হাজার মৎস্য নৌকা ও জাল আংশিক এবং সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছিল। ২ লক্ষ জেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বাংলাদেশে সর্বমোট ৭ লক্ষ ৫০ হাজার জেলে রয়েছিল। ১৯৭১ সালে ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ে ৩ লক্ষ জেলে বেকার হয়ে পড়েছিল। এদের নৌকা, জাল ও মাছ ধরার অন্যান্য সামগ্রী সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির মাধ্যমে এই বিরাট কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে। এই কর্মসূচি অনুযায়ী প্রথমে কিছু সংখ্যক জেলেকে নৌকা ও নাইলন সুতা সরবরাহ করা হবে। কিছু সংখ্যক নৌকা যন্ত্রচালিত হবে। কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির সহায়তায় মৎস্য বহনের জন্য যানবাহন ও ট্রাকের ব্যবস্থা করা হবে। বরফকল ও কোল্ডস্টোরেজও নির্মাণ করা হবে। সমবায়ের ভিত্তিতে স্থানীয় উদ্যোগের মাধ্যমে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে বলে উল্লেখ করেছিলেন। [দৈনিক ইত্তেফাক, ৭ জুলাই ১৯৭২]
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার দেড় মাসের মধ্যে তথা ৩১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেন। তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয় বাংলাদেশের সর্বপ্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮)। ১৯৭৩ সালের ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রথম পাঁচশালা উন্নয়ন পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। পরিকল্পনার সর্বমোট ৪৪৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সর্বনিম্ন চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ এবং সামাজিকভাবে কাম্য আয়ের সুষম বণ্টন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের জন্য অর্থনীতির বিকাশ সাধন পাঁচশালার পরিকল্পনার লক্ষ্যরূপে ধার্য্য করা হয়েছিল। পরিকল্পনার রূপকারদের মতে এই পরিকল্পনা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত করবে এবং পরিকল্পনাকালে জাতীয় উৎপাদন শতকরা ৩০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে উল্লেখ করেছিলেন।  [দৈনিক ইত্তেফাক, ২৮ নভেম্বর ১৯৭৩]
প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় মৎস্য খাতের উদ্দেশ্যগুলো ছিল- (১) মাছের উৎপাদন প্রায় ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি করা, ১৯৬৯-৭০ সালের বেইজ লাইন উৎপাদন ৮.০৯ লক্ষ টন থেকে ১৯৭৭-৭৮ সালে ১০.২১ লক্ষ টন; (২) অভ্যন্তরীণ ও সামুদ্রিক উভয় ক্ষেত্রেই মৎস্য সম্পদের সর্বাধিক ব্যবহার করা; (৩) জেলেদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি করা; (৪) মৎস্য এবং মৎস্য সংশ্লিষ্ট শিল্পে বৃহত্তর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং (৫) মাছের রপ্তানি বৃদ্ধি করা, ১৯৭৭-৭৮ সালের মধ্যে প্রায় ২০,০০০ টন।
প্রাকৃতিক অবদান সবুজ বনরাজি, অগণিত নদীনালা ও অসংখ্য সবুজ প্রান্তরের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু সরকার ব্যাপক কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। এ ক্ষেত্রে ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে সরকারের অগ্রগতির চিত্র নিম্নরূপ:
ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবীদের পুনর্বাসন কর্মসূচির ব্যয়: ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে মৎস্যচাষে পতিত জলাভূমি উন্নয়ন ১,৩০০০ একর; পোনা উৎপাদন খামার স্থাপন ৪টি; মৎস্য খামার স্থাপন ৩টি; মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি গঠন ২০২টি; মাছ ধরা নৌকা বিতরণ ৭০০টি; [বাংলাদেশ সরকার, ১৯৭১-৭৫, এইচ টি ইমাম, পৃষ্ঠা ৩১৯-৩২০]
প্রকৃত জেলেদের তালিকা বা স্বীকৃতি না থাকায় অনেক সময় জেলেদের নাম ব্যবহার করে অমৎস্যজীবীগণ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে থাকতো। ফলে প্রকৃত জেলেরা তাদের প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতো। জেলেদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, গ্রামীণ আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, মৎস্য সম্পদের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সানুগ্রহ দিকনির্দেশনায় প্রকৃত জেলেদের শনাক্তকরণ ও সামাজিকভাবে পেশার স্বীকৃতিস্বরূপ জেলে নিবন্ধন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৬.২০ লক্ষ জেলের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে এবং ১৪.২০ লক্ষ জেলের পরিচয়পত্র প্রস্তুত ও বিতরণ করা হয়েছে। জলাশয়ে মাছ ধরার সময় ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বজ্রপাতের কারণে ও জলদস্যুদের হামলায় অথবা বাঘ, কুমির বা হিং¯্র জলজ প্রাণীর আক্রমণে নিবন্ধিত নিহত, নিখোঁজ অথবা স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও জীবিকার ঝুঁকি হ্রাস করার নিমিত্ত  ‘নিহত জেলে পরিবার বা স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেদের আর্থিক সহায়তা প্রদান নীতিমালা, ২০১৯’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ নীতিমালার আলোকে জলাশয়ে মাছ ধরার সময় ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বজ্রপাতের কারণে ও জলদস্যুদের হামলায় অথবা বাঘ, কুমির বা হিং¯্র জলজ প্রাণীর আক্রমণে নিবন্ধিত নিহত, নিখোঁজ জেলে অনধিক ৫০,০০০/- টাকা এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় এবং নিবন্ধিত স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেকে অনধিক ২৫,০০০/- টাকা এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমুদ্র সীমা বিজয় এবং সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়ে গেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারিত হওয়ায় ১,১৮,৮১৩ বর্গ কিমি. এলাকায় মৎস্য আহরণে আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মৎস্য উৎপাদনে বিশ^ পরিম-লে বাংলাদেশের সাফল্য আজ   স্বীকৃত। ঞযব ংঃধঃব ড়ভ ডড়ৎষফ ঋরংযবৎরবং ধহফ অয়ঁধপঁষঃঁৎব ২০২০ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশে^ বাংলাদেশের অবস্থান  ইলিশ আহরণে প্রথম, স্বাদু পানির মাছের বৃদ্ধির হারে দ্বিতীয়, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, তেলাপিয়া উৎপাদনে চতুর্থ, বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে পঞ্চম, সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টাশিয়া উৎপাদনে অষ্টম, সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ফিনফিশ উৎপাদনে ১২ তম।

লেখক : সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার ও বিভাগীয় প্রশিক্ষক, মৎস্য অধিদপ্তর, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ। মোবাইল : ০১৭৬৫১১১৪৪৪, ই-মেইল : ংুঁধহ.ফড়ভ@মসধরষ.পড়স


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon